পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নিয়মাবলীঃ আসসালামু আলাইকুম। নামাজ জান্নাতের চাবি এবং শান্তির আগমনপথ। নামাজ আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পথ।কোরআনে ইমানের পর নামাজের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ব রয়েছে। যেমন-কালেমা,সালাত,রোজা,হজ্জ ও যাকাত। এই পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে হজ্জ ও যাকাত সার্মথ্যের উপর নির্ভর করে।কিন্তু নামায ও রোজা প্রত্যক ব্যক্তির জন্য ফরজ।কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে তা কাফ্ফারা দিয়ে দিলে গুনাহ মাপ হয়।
কিন্তু নামাজের কোনো কাফ্ফারা হয় না। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। কোরআনে পাঁচটি স্তম্বের মধ্যে কালেমার অর্থাৎ ইমানের পরেই নামজের প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়। কোরআনে বলা হয়েছে পানির অভাবে নামাজ পড়তে না পারলে তায়াম্মুমের মাধ্যমে ওযু করে নামাজ আদায় করতে।
দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে না পারলে বসে পড়তে, বসে পড়তে না পারলে শুয়ে পড়তে,একদম হাত-পা অচল হয়ে গেলে চোখের ইশারায় নামাজ আদায় করার কথা কোরআনে উল্লেখ আছে। তাই যেহেতু নামাজ আমাদের উপর ফরজ এবং আল্লাহ রব্বুল আলামীনের আদেশ এটি। সেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সেটি আমাদের সুন্দর ভাবে পালন করা উচিত।এবার আশা যাক নামাজের নিয়মে।
আমরা অনেকেই নামাজ পড়তে চায় কিন্তু নামাজের নিয়ম না জানাই পড়তে পারি না। আবার অনেকেই ভুল নামাজ পড়ে থাকি সহীহ শুদ্ধ ভাবে পড়তে পারি না।যেহেতু কোরআনে শুধু নামাজের কথা উল্লেখ আছে নামাজের নিয়মের কথা উল্লেখ নেই। সেহেতু নামাজের নিয়মটি হাদিস মোতাবেক হয়ে থাকে। তবে চলুন আজ আপনাদের এই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটার হাদিস মোতাবেক সমাধান দেওয়া যাক।
নামাজের পাঁচটি ওয়াক্ত। ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার। কোনো মাখরুহ ওয়াক্ত ছাড়া যেকোনো সময় নামাজ আদায় করা যাবে। তবে আযান শুনে জামায়াতের সাথেই নামাজ আদায় করা উত্তম।
নামাজ আদায়ের নিয়মাবলি জেনে নিন
পাক-পবিত্র হওয়া: নামাজ পড়ার পূর্বে কিছু আহকাম রয়েছে যা আপনাকে অবশ্যই নামাজের পূর্বে পালন করতে হবে। যেহেতু এটি মহান রব্বুল আলামীনের সাথে সাক্ষাৎ পথ। সেহেতু অপবিত্র অবস্থায় এটি পালন করা যাবে না। তাই নামাজের পূর্বে অবশ্যই গোসল বা ওযু করে পবিত্র হতে হবে।পাক-পবত্রি কাপড় পরিধান করতে হবে এবং পাক-পবিত্র স্থানে বসে নামাজ আদায় করতে হবে।
নামাজের রাকাত সমূহ: নামাজের প্রথম নিয়মাবলি হলো নামাজের রাকাত সম্পর্কে জানা। পাঁচটি রুখেনর নামাজের রাকাত সমূহ আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি। ফজর দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত ফরজ,মোট চার রাকাত। যোহর চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ,দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল মোট বারো রাকাত। আসর চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ, মোট আট রাকাত।
মাগরিব দুই রাকাত সুন্নত, তিন রাকাত ফরজ,দুই রাকাত নফল মোট সাঁত রাকাত। এশার চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ,দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল,তিন রাকাত বিতির,মোট পনেরো রাকাত।বিতির নামাজ আদায় করা ওযাজিব।
অবশ্যই নামাজ নিঃশব্দে পড়তে হয়। সূরা সমূহ হতে শুরু করে সব নিরবে পড়তে হবে। অবশ্যই মনোযোগী হতে হবে নামাজে।
নামাজের নিয়ত: নামাজ শুরু করার আগে নামাজের নিয়ত করতে হবে। পারলে দাড়িয়ে নামাজ পড়া উত্তম।দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে নামাজের নিয়ত করতে হবে। দুই রাকাত নামাজের নিয়ত"নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'আলা রাকয়াতাই সালাতিল ফজর/যোহর/মাগরিব/এশার।সুন্নাতু/নফল/ফরজ রাসুলিল্লাহি তা'য়ালা মুতাও ইয়াজাজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার"। আসরের যেহেতু চার রাকাত রয়েছে দুই রাকাত নেই তাই দুই রাকাতের নিয়ত আসরের নামাজে প্রয়োজন নেই।
দুই রাকাত নিয়তের অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি কেবলা মুখী হয়ে বা তোমার পবিত্র ঘর মোবারক কাবার মুখী হয়ে ফজর/যোহর/মাগবির/এশারে দুই রাকাত সুন্নত/নফল/ফরজ নামাজ আদায় করছি।
চার রাকাতের নিয়ত"নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা রাকয়াতাই সালাতিল যোহর/আসর/মাগরিব/এশার সুন্নাতু/ফরজে/ওয়াজিব রাসুলিল্লাহি তা'য়ালা মুতাও ইয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবর। "ফজর যেহেতু দুই রাকাতের তাই ফজরের সময় চার রাকাতের নিয়ত প্রয়োজন নেই।
চার রাকাত নিয়তের অর্থ: "হে আল্লাহ!আমি কেবলামখী বা তোমার পবিত্র ঘর মোবারক কাবার মুখী হয়ে যোহর/আসর/মাগরিবের/এশারের চার রাকাত ফরজ/সুন্নত/ওয়াজিব নামাজ আদায় করছি।
তিন রাকাত নামাজের ক্ষেত্রেও চার রাকাতের নিয়ত টা করা যাবে।
নিয়ত করার পর আল্লাহু আকবার বলে তাকরিমে তাহরিমা অর্থাৎ হাত বাঁধতে হবে। এরপর মনে মনে ছানা পড়তে হবে।
ছানা: "সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা,ওয়া তাবারকাসমুকা,ওয়া তা'য়ালা জাদ্দুকা,ওয়া লা ইলাহা গইরুক"।
অর্থ: "হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, তুমি প্রশংসাময়,তোমার নাম বরকতময়,তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে,আর তুমি ব্যতীত সত্যিকারে কোনো মাবুদ নাই"।
এরপর " আউযু বিল্লাহহি সাইতনির রযিম", "বিসমিল্লাহহির রহমানির রহিম" অর্থ হে আল্লাহ!আমি তোমার পবিত্র নামে শুরু করছি। পড়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। এরপর আবার বিসমিল্লাহ বলে যেকোনো একটি সূরা পাঠ করবেন।
এরপর আল্লাহু আকবর বলে রুকুতে যেতে হবে।রুকুতে গিয়ে "সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আযিম" কমপক্ষে তিনবার পাঠ করবেন। আপনি চাইলে তিন বারের বেশি পাঠ করতে পারেন তবে এক্ষেত্রে বিজোড় সংখ্যক পাঠ করবেন।
এরপর "সামি আল্লাহ লিমান হামিদা" বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।দাঁড়ানোর পর দাঁড়িয়ে"রাব্বানা লাকাল হামদ্' হাম দান খাছিরন তয়ুবান মুবারকান ফী" এরপর আল্লাহ আকবার বলে সেজদাতে যাবেন। খেয়াল রাখবেন সবার আগে হাটু জমিনে লাগবে এবং তারপর দুই হাত এবং নাম ও কপাল জমিনের সাথে লাগাবেন।
সেজদায় "সুবহানা রাব্বিয়াল আলা" বলবেন রুকুর মতো এখানেরও সবনিম্ন তিনবার এর থেকে বেশি হলে বিজোড় সংখ্যক পাঠ করতে হবে।এর পর উঠে বসবেন। দুই সিজদাহ্ মাঝখানে "আল্লাহুম্মা আগ ফিরলি ওরা হামনি ওহা দীনি ওয়া ফিনি ওয়ার যুকুনি" পাঠ করতে পারেন। এতে আল্লাহ কাছে দুই সিজাদ্ মধ্যখানে রিজিক এবং পানা দোয়া করা হয়।
এর পর দ্বিতীয় সিজাদর্ করবেন প্রথম সিজাদার মতো। তারপর আবার আল্লাহু আকবর বলে দাঁড়িয়ে যাবেন। তারপর বিসমিল্লাহ পাঠ করে আবার সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন এবং একটি ছোট সূরা পাঠ করবেন এরপর আবার আগের বারের মতো রুকু সিজদা করবেন।যদি দুই রাকাতের নামাজ হয় তবে এখানেই শেষ বৈঠক করে নামাজ শেষ করবেন।
যদি চার রাকাতের নামাজ হয় তবে,তাশাহুদ পাঠ করবেন। নিচে অর্থ সহ তাশাহুদ আমি দিয়ে দিব। তাশাহুদ পাঠ করে আবার দাঁড়িয়ে যাবেন এবং পূর্বের ন্যায় নামাজ পড়বেন তবে এবার নিয়ত করার প্রয়োজন নেয়। দাঁড়িয়ে ছানা পাঠ করে পূর্বের ন্যায় নামাজ পড়তে পারবেন।
শেষ বৈঠক: শেষ বৈঠকে তাশাহুদ,দুরুদে ইব্রাহিম, দোয়ায়ে মাসূরা পাঠ করবেন। আমি নিচে দিয়ে দিব দুরুদে ইব্রাহিম, তাশাহুদ এবং দুয়ায়ে মাসূরা। এসব পাঠ শেষে প্রথমে ডানদিকে এবং পরে বাম দিকে সালাম ফিরাবেন"আস্সলামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবার কাতুহু"। এরপর আপনি মোনাজাত করবেন। মোনাজাত প্রথমে রাসুলের জন্য এবং পরে সমস্ত মানবজাতির জন্য এবং নিজের জন্য দোয়া পানা চায়তে হবে।কেননা নামাজ শেষে মোনাজানে দোয়া করলে আল্লাহ ওই বান্দার উপর খুশি হন।
তাশাহুদ: আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াসলমালাওয়াতু ওয়াত্ ত্বায়্যিবাতু, আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সলিহিন,আশাহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু"।
অর্থ: "সকল সম্মান,সকল উপসনা ও সকল পবিত্র বিষয় আল্লাহর জন্য।হে নবী! আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর সকল অনুগ্রহ ও সমৃদ্ধি নাযিল হোক।শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপরে ও আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের উপরে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যো, আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,মুহাম্মদ (স.)তাঁর বান্দা ও রাসূল।"
দরুদে ইব্রাহিম: আল্লাহুমা ছাল্লিআলা মুহাম্মদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।আল্লাহুমা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলাআলি মুহাম্মাদিন কামা বারকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তার বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত।
দোয়ায়ে মাসূরা: আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসি যুলমান কাসিরাওঁ ওয়ালা ইয়াহ ফিরুয জুনূবা ইল্লা আন্তা, ফাগফির লি মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনি ইন্নাকা আন্তাল হফুরুর রহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের আত্নার উপর বড্ড অত্যাচার করেছি,গুনাহ মাফকারি একমাত্র আপনি। অতঃএব আপনি নিজ থেকেই আমাকো সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি দয়া করুন।নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
আল্লাহ সন্তুষ্টি লাভের আশায় এবং পরকালে জান্নাত লাভের আশায় আমাদের জীবন টাকে পাপ মুক্ত রাখতে হবে। অথবা পাপ করলে তা আল্লাহর নিকট স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ নিকট ক্ষমা প্রার্থনারই একটি পথ নামাজ। যত পাপ করি না কেন আল্লাহ নিকট ক্ষমা পার্থনা করলে তিনি পাহাগ সমান ক্ষমা মাপ করে দেন।কেননা তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখতে হলে অবশ্যই নামাজ আদায় করতে হবে। এবং আল্লাহ নিকট পাপ থেকে আশ্রয় চায়তে হবে।
পরিশেষে আমাদের কথা
জীবনে যেকোনো সমস্যায় আল্লাহর নিকট সাহায্য চায়তে নামাজ পড়তে হবে। কেননা এটিই আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করার একমাত্র পথ। যারা নামাজ পড়তে পারেন না বা সঠিক নিয়মে নামাজ পড়তে চান তবে সঠিক নিয়ম না জানাই নামাজ পড়তে পারেন না। আশা করি তারা নিশ্চিই এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হবেন।জাজাকাল্লাহ খাইরান।
Tags:
Info