![]() |
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় |
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায়ঃ আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি চিন্তিত? চিন্তা করবেন না। আসলে, আমরা মানব জাতি স্বভাবতই অলসপ্রেমী। ঘুরে-বেড়ানো, মোবাইল চাপা, আড্ডা দেওয়া এসবে আমাদের আগ্রহ না চাইতেও কিন্তু চলে আসে। আর যখন পড়ালেখার কথা আসে তখন আমাদের মধ্যে অনীহা দেখা যায়। ফলপ্রসূ আমরা মা-বাবার আশানুরূপ ফল লাভ করতে পারি না। আপনি নিশ্চিয় নিজের পড়ালেখার এই অবস্থাকে পরিবর্তন করতে চান!
এই অবস্থা পরিবর্তন করতে হলে নিশ্চয়ই আপনাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে? প্রিয় পাঠক, আপনি কি পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় গুলো জানতে চান? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। হ্যাঁ আজ আমি আপনাদের এমন কিছু টেকনিকের কথা বলবো যা আপনাকে পড়ালেখায় মনোযোগী হতে সাহায্য করবে।তবে চলুন টেকনিকসমূহ জেনে নেওয়া যাক।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় সমূহ
পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে চাইলে আপনাকে কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। আজকের পোস্টে আমরা সেই উপায় গুলো সম্পর্কেই আলোচনা করেছি। তাই আশা করবো সম্পূর্ণ পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে চলুন ধাপে ধাপে জেনে নেওয়া যাক পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় গুলো সম্পর্কে।
১. নিদিষ্ট দিন লিপি তৈরি করে পড়া
পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে হলে অবশ্যই প্রথমে আপনার একটা দিন লিপি তৈরি করতে হবে। কখন পড়ালেখা করবেন, কখন বাকি কাজ গুলো করবেন। যেমন-কত সময় ধরে পড়বেন, কত সময় বিদ্যালয়/কলেজ করবেন, কত সময় কোচিং/প্রাইভেট পরবেন, কত সময় খেলাধুলা করবেন। সব কিছু একটি নিদিষ্ট তালিকার মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ করলে তা আমাদের অভ্যাসে পরণত হয়। যা আমাদের পড়ালেখায় মনোযোগী হতে এবং অন্যান্য কাজ গুলোও মনযোগ সহকারে সম্পূর্ণ করতে সহয়তা করে। তাই একটি দিনলিপি তৈরি করুন এরপর সেটি অনুযায়ী চলুন।
২. খাওয়া-দাওয়া ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
অবশ্যই আপনার সময় মতো খাবার খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। কেননা, পুষ্টিকর খাবার পড়ালেখা মনে রাখার গতি বৃদ্ধি করে। ভিতর থেকে ব্রেণকে শক্তিশালী এবং মুখস্থ বিদ্যা ভালো করে। রাত ৯টা মধ্যে রাতের খাবার শেষ করতে হবে এবং রাত ৯:৪৫-১০:১০ এর মধ্যে ঘুমাতে হবে। সকাল ৬ টাই ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে। এতে আমাদের ব্রেইন সতেজ এবং ফুরফুরে থাকে। যার ফলে আমরা পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারি এবং আমাদের ব্রেন পড়ালেখা খুব সহজে আয়ত্ত করতে পারে। যা আপনার পড়াশোনায় মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
৩. নিজেকে মোটিভেট করা
মনোযোগ বাড়ানোর জন্য সাধারণ প্রয়োগ হলো ধ্যান দেওয়া, পড়ালেখা শুরু করার আগে আত্ম-মোটিভেশন, শান্ত এবং নির্মল পরিবেশ তৈরী করা, নির্ধারিত সময়ে পড়া, মনোযোগ প্রশিক্ষণ। এছাড়া , পড়ালেখা পড়ুয়া বন্ধু নির্বাচন করা, সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা, একাগ্রতার গুরুত্ব বোঝা, একটি বিভ্রান্তি-মুক্ত অধ্যয়নের পরিবেশ তৈরি করা। নিজেকে মোটিভেট করতে থাকুন, আপনার পড়াশোনায় মন বসবে আশা করি।
৪. ব্যায়াম বা শারীরিক পরিচর্যা / ব্যায়াম
সকালে ৬টায় ঘুম থেকে উঠে কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করতে হবে পড়তে বসার আগে। কেননা এটি আমাদের ব্রেইন সচল করে তুলে। যার ফলে দীর্ঘদিন পড়া মস্তিষ্ক ধরে রাখতে পারে। এর পাশাপাশি শারীরিক ব্যায়ামও করতে পারেন। কেননা শারীরিক ব্যায়াম আমাদের মন মস্তিষ্ক সতেজ করে এবং আমাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
৫. টেবিলে পড়তে বসা
অবশ্য টেবিলে এবং চেয়ারে বসে পড়াশোনা করতে হবে। কেননা এটি আমাদের স্থির হয়ে পড়তে সাহায্য করে। যার ফলে আমাদের মাঝে অলসতা কাজ করে না। শোয়ার বিছানা বা সোফায় ঠেস দিয়ে আরাম করে পড়তে বসলে পড়ার মনযোগ বিঘ্ন হয়। অনেক সময় দেখা যায় পড়তে বসে ঘুমিয়ে পড়ি আমরা। তাই এই অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করা উচিত। তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে সুবিধা হবে।
৬. পড়ার আগে সব কাজ শেষ করা
পড়তে বসার আগে অবশ্যই বাকি কাজ গুলো শেষ করে পড়তে বসতে হবে। কেননা বার বার পড়ার টেবিল থেকে উঠলে পড়ার মনোযোগ নষ্ট হয়। পড়ার সকল সরঞ্জাম সহকারে আমাদের পড়তে বসা উচিত। যেন বার বার আমাদের পড়ায় মনোযোগের বিঘ্ন না ঘটে।
৭. ইলেকট্রনিক বস্তু পড়ার টেবিল হতে দূরে রাখা
টেবিলে কোনোরকম যান্ত্রিক বস্তু রাখা যাবে না। যেমন মোবাইল, ল্যাপটপ, স্মার্টওয়াচ ইত্যাদি। কেননা কিসের নোটিফিকেশন আসলো তা দেখতে গিয়ে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা নেটওয়ার্ক জগতে ডুবে থাকি। গবেষণায় দেখা গেছে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ মনোনিবেশ করতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে তা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ইলেকট্রনিক ডিভাইস দূরে রেখে পড়তে বসা উচিত। মোবাইল নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে তবেই আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে পারবো।
৮. পড়তে বসার আগে ক্ষুধা নিবারণ করা
বসার আগে খাবার খেয়ে পড়তে বসতে হবে এবং পড়ার টেবিলে পানি নিয়ে বসতে হবে। কারণ ক্ষুধা বা তৃষ্ণা আমাদের পড়ার মনোযোগ নষ্ট করে এবং আমরা পড়ায় মনোযোগী হতে পারি না। তাই হালকা বা প্রয়োজন মতো খাবার আহার করে পড়তে বসুন।
৯. রটিন তৈরি করা
কোনো কিছু পরিচালনা করার আগে তার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা লাগে। নয়তো সেই কাজে কোনো না কোন বিঘ্ন ঘটে। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। তেমনি পড়ার ক্ষেত্রেও এমন পরিকল্পনা করা উচিত।প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট রটিন করে সেই অনুযায়ী পড়া শেষ করা। এটিকে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার বিশেষ উপায় বলা যায়।
১০. খাতা সহযোগে পড়তে বসা
বইয়ের সাথে অবশ্যই খাতা থাকা বাধ্যতামূলক। কোনো একটি বিষয় খুব সহজে মনে রাখা এবং মস্তিষ্কে ধারণ করার খুব সহজ উপায় হলো খাতায় লিখে তা আয়ত্ত করা। তাই আমরা যা পড়বো তাঁর মধ্যে গুরুত্তপুরন লাইন গুলো অবশ্যই খাতায় লিখবো। কেননা একবার লিখা দশবার পড়ার সমান।
১১. সহজ এবং বুঝে শুনে পড়া
ছোটবেলা থেকে আমাদের ছড়া, কবিতা ইত্যাদি দাঁড়ি কমা সহ মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভ্যাস হয়ে গেছে সবকিছু মুখস্থ করে ফেলার। এটি খুব ভুল একটি পদ্ধতি। অনেকেই আছে, যাদের কোন কিছুর সংজ্ঞা জিজ্ঞেস করলে হুবুহু বই এর সংজ্ঞা গড়গড় করে বলে দিতে পারবে, কিন্তু ব্যাখ্যা করতে বললেই আর পারে না। তাই আপনি যে টপিক নিয়ে পড়বে সেটা আগে বড়দের থেকে একটু বুঝে নিবে এবং তা বার বার নিজের বুদ্ধিতে চিন্তা করবে। কেননা না বুঝে পড়তে গেলে সাধারণত আমাদের ব্রেইন তা নিতে পারে না বা নিলেও বেশি সময় তা স্থায়ী থাকে না।তাছাড়া বুঝে পড়লে তা আমাদের পড়তে আনন্দ লাগে এবং তা আমাদের মস্তিষ্ক দীর্ঘদিন ধরে রাখতে সক্ষম হয়।এককথায় বলতে গেলে আমরা বুঝে পড়লে সেই পড়াটা সহজে ভুলি না।
১২. পড়তে বসার অভ্যাস গড়ে তুলা
অনেকসময় না পড়লেও টেবিলে বসে থাকা কেননা পড়ার টেবিলে বসে থাকলে কিছুটা হলেও মনোযোগ বইয়ের দিকে ধাবিত হবে। পড়ালেখা নিয়ে আমাদের মস্তিষ্কে চিন্তা চেতনা বাড়বে। দীর্ঘসময় পড়াশোনা করা একটি অভ্যাসের ব্যপার। হঠাৎ করে এ অভ্যাস রপ্ত করা যায় না। শুরুতে পড়াশোনায় মনযোগ না আসলেও টেবিল ছেড়ে ওঠা যাবে না। বই বা পড়ার বিষয়বস্তু নিয়ে টেবিলেই বসে থাকতে হবে। এই সময় তা অভ্যাসে পরিণত হবে।
১৩. পড়ার মাঝে বিরতি নিন
একটানা কোনো কাজ করলে বিরক্তি চলে আসে এটা স্বাভাবিক বিষয়। তাই একনাগাড়ে না পরে ২ ঘন্টা পরে ৩০ মিনিট মতো একটা ব্রেক নিন। সেই ব্রেকে একটু ঘুরে আসুন,গান শুনুন,আড্ডা দিন। তবে তা যেনো দীর্ঘ না হয়। দীর্ঘ হলে আপনার পড়াশোনায় মনযোগ বিঘ্ন হতে পারে।
১৪. লক্ষ্য স্থির রেখে পড়তে বসা
পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হলে আমাদের অবশ্যই লক্ষ স্থির রাখতে হবে এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের তিব্র আগ্রহ থাকতে হবে। একটা নির্দিষ্ট টার্গেট নিয়ে পড়তে হবে। অধ্যয়ন সেশনের সময় আপনি কি অর্জন করতে চান তা নির্ধারণ করুন এবং আপনার লক্ষ্যগুলিকে পরিচালনাযোগ্য কাজগুলিতে বিভক্ত করুন। মনে রাখবেন,"লক্ষ্যহীন মানুষ, পথভ্রষ্ট পথের পথিকের মতো"।
১৫. বদ অভ্যাস পরিহার করুন
পড়বো পড়বো বলে অনেক সময় দেখা যায় সময় চলে যায় তবুও পড়া হয়ে উঠে না এমন বদ অভ্যাস পরিহার করতে হবে। কেননা অনেক সময় দেখা যায় পড়া জমে থাকায় পড়ার প্রতি মনযোগ বা আগ্রহ জন্মায় না। তাই রুটিন করে দিনের পড়া দিনে শেষ করা।
১৬. যখন মনোযোগ বসে তখন পড়াশোনা করা
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের পছন্দ ভিন্ন ভিন্ন রূপ। তাই সবাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে পড়ছে বলে আপনাকেও এই সময়ে পড়তে হবো এমন কোনো কথা নেই। আপনি আপনার মতো করে সময়টা নির্ধারিত করবেন কোন সময়ে গভীর রাতে নাকি ভোরের শান্ত পরিবেশে আপনার পড়তে ভালো লাগে। সেই অনুযায়ী পড়তে বসুন।
১৭. বন্ধু বিবেচনায় সর্তক হোন
মানুষ একা বাঁচতে পারে না। আবার দীর্ঘদিন সঙ্গীহীন থাকলে তা মানুষতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে।তবে সঙ্গী বা বন্ধু নির্বাচনে সর্তক থাকা ভালো। অনেক সময় দেখা যায় আপনার বন্ধু সারাদিন অনলাইন, গেম, চ্যাটিং এসবে ব্যস্ত থাকে। ফলে আপনার মনযোগও সেদিকে ধাবিত হয়। আবার অনেক বন্ধু সারাদিন পড়ে বলে আপনারও বই নিয়ে বসে থাকতে মন চাইবে। তাই বন্ধত্বটাও অনেক সময় পড়ালেখায় অমনোযোগী হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় - সারমর্ম
পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় হচ্ছে, নিয়মিত পড়াশোনা করতে থাকা। একটি রুটিন তৈরি করা এবং সেই রুটিন অনুসারে পড়াশোনা করা। আস্তে আস্তে করে বেশি বেশি পড়ার অভ্যাস করা তাহলেই পড়াশোনায় মনোযোগ আনতে পারবেন।
উপসংহার
পড়াশোনা মনোযোগ সহকারে না করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব না। তাই আমাদের সকলের উচিত পড়াশোনায় মনোযোগ তৈরি করা। মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করা। আজকের পোস্টে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি এই কার্যকরী উপায় গুলো অনুসরণ করলে আপনার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। তাই আশা করবো উপরের এই ১৭ টি পড়াশোনায় মনোযোগ আনার উপায় অনুসরণ করুন। আজকের পোস্ট সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাবেন। আজকের পোস্ট টি এখানেই শেষ করছি সবাই ভালো থাকবেন, আল্লাহ্ হাফেজ।
Tags:
Education