রাতে ঘুমানোর আগে আমল (প্রত্যেক মুসলিম ব্যাক্তির জেনে রাখা উচিত)

রাতে ঘুমানোর আগে আমল
রাতে ঘুমানোর আগে আমল

রাতে ঘুমানোর আগে আমলঃ আসসালামু আলাইকুম। আপনি কি রাতে ঘুমানোর আগে আমল করা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসতে পারে।  

আল্লাহ পৃথিবীর প্রক্যতটি প্রাণীকে সৃষ্টি করছে তাঁর ইবাদতের জন্য। এই পৃথিবীতে যে যত বেশি ভালো কাজ করবে পরকালে সে তত বেশি সুখে থাকবে। তাই প্রত্যেক মুসলিম জাতির শুধু ইহকালের কথা ভাবলেই হবে না পরকালে কথাও ভাবতে হবে। এই জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দেখানো পথ অনুসরণ করে চলতে হবে। মুমিনগণের প্রত্যকটি কাজ ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। 

আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের নিদ্রাকে করেছি আমি ক্লান্তি দূর কারী। (সূরা নাবা আয়াত:০৯)। 

তাই রাতে ঘুমানোটাও এক ধরনের ইবাদত। তাই রাতের ঘুম টাও আমাদের আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিয়োজিত রাখতে হবে। তাই আমাদের রাতে ঘুমানোর আগে কিছু আমল করতে হবে, যেন আমাদের ঘুমটাও ইবাদতে পরিণত হয়। রাতে ঘুমানোর আগে কিছু আমলের কথা রাসুল (স.) তার হাদিসে বর্ণনা করছেন।

রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো

রাতে আমরা অনেকেই গেম,নেটওয়ার্ক, গল্পগুজবে ডুবে থাকি।যা আমাদের আমলকে নষ্ট করে এবং আল্লাহ নিকট হতে আমাদের দূরে নিয়ে যায়। রাতে এশার নামাজের পর রাসুল (স.) রাত জাগতে নিষেধ করছেন। এবং তিনি এটি অপছন্দ করতেন। 

তাছাড়া রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো শরীরে জন্য ভালো।এই ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের রাতের গল্পগুজবে মগ্ন হতে নিষেধ করতেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ২৪৩৫)। তবে আল্লাহর ইবাদতের জন্য রাত জাগা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

উন্মুক্ত স্থানে না ঘুমানো

উন্মুক্ত স্থান বলতে ছাঁদ,বারান্দা বা খুলা জায়গাকে বুঝায়। আমরা অনেকই আছি ছাঁদ বা বারান্দায় ঘুমাতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে এতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি হতে পারে। কেননা মহান আল্লাহ তা'য়ালা শুধু মানুষ জাতিকে নয় আরো অনেক প্রজাতি পৃথিবীতে সৃষ্টি করছেন। যা মানব জাতির ক্ষতি করতে পারে। 

এ সমন্ধে রাসুলুল্লাহ এক হাদিসে বর্ণনা করেন - ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ ৫০৪১)।

পানির পাত্র বা খাবার ঢেকে রাখা

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন তোমরা অবশ্যই ঘুমানোর আগে পানির পাত্র ঢেকো রাখো। খাবারদ্বয় ঢেকে রাখো। কেননা শয়তান ঢেকে রাখা জিনিস উন্মুক্ত করে না (বুখারী ৩৩১৬)।

দরজা বন্ধ করা এবং রাতে বাইরে না যাওয়া

রাসুল (স.) এরশাদ করছেন যে জ্বিন জাতিরা রাতের বেলা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। তাই বলছেন,তোমাদের সন্তানদের তোমরা রাতে অন্ধকারে বাইরে যেতে দিও না। এবং দরজা আটকে দাও কেননা শয়তান আটকানো দরজা খুলে না।

বিছানা ঝেড়ে পেলা:হযরত আয়শা (আ.) হতে বর্ণিত,"রাসুল(স.) ঘুমানোর আগে বিছানা ঝেড়ে নিতেন।বিছানায় এমন কিছুর বিচরণ থাকতে পারে যা মানব জাতির জন্য ক্ষতি কর। এই জন্য রাসুল (স.) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন কাপড় দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়।

ডান পার্শ্ব হয়ে শোয়া

রাসুল (স.) ডান পার্শ্ব হয়ে শোয়ে ডান গালের নিচে হাত রেখে দোয়া পড়ে ঘুমাতেন। এক হাদিস হতে বর্ণিত, ডান পাশ্ব হয়ে ঘুমালে দূর্স্বপ্ন থেকে বাঁচা যায়। যা শয়তান মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য করে থাকে। ডান পার্শ্ব হয়ে শোয়া অবস্থায় স্বপ্ন দেখলে তা সত্যি হয়।

পবিত্র হয়ে ঘুমানো

ঘুম একধনের মৃত্যু। রাতে ঘুমালে সকালে উঠতে পারবো এমন কোনো নিশ্চিয়তা নেই। তাই পাক-পবিত্র হয়ে ঘুমানো ভালো। এতে শয়তানের প্রর্রচনা হতে বাঁচা যায়। শয়তানে কাছে আসতে পারে না।


ঘুমের দোয়া পড়া

আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে ঘুমের দোয়া পাঠ করে না আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য লাঞ্ছনা ঘোষিত। (আবু দাউদ,হাদিস:৪৮৫৫) তাই ঘুমানোর আগে ঘুমের দোয়া পাঠ করা। 

ঘুমের দোয়া: বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া।’

অর্থ: হে আমার রব আমি আপনার নামে শয়ন করছি এবং পুনরায় আপনার দয়ায় জীবিত হবো।(বুখারী, হাদিস:৬৩২০)

তাসবী পাঠ করা

রাতে ঘুমানোর আগে ডান পার্শ্ব হয়ে ২১ বার বিসমিল্লাহ, ৩৪ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩১বার সুবহানাল্লাহ, তসবী পাঠ করা কথা রাসুলুল্লাহ এর হাদিসে বর্ণীত আছে। ২১ বার বিসমিল্লাহ পাঠ করলে একজন ফেরেস্তা সারারাত সেই ব্যক্তির জন্য নেক সাওয়াব লিখতে থাকে।

তিন কূল পাঠ করা

সূরা নাস, সূরা এখলাস, সূরা ফালাক কে তিন কুল বলা হয়। তিন কূল তিন বার পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে মাসাহ্ করলে। জ্বিন জাতির খারাপ নজর হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এবং শান্তিতে ঘুম হয়। আয়শা (আ.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(স.) যখন বিছানায় শয়ন করতেন তখন তিনি তিন কূল তিন বার পাঠ করে দুই হাতে ফু দিয়ে সারা শরীর মাসাহ্ করতেন। (বুখারী হাদিস ৫০১৭)

সূরা কাফিরুন পাঠ করা

ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে সূরা কাফিরুন পাঠ করলে ইমান দৃঢ় হয় এবং শিরক হতে মুক্তি পাওয়া যায়। এক সাহেবাকে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, রাতে ঘুমানোর আগে কাফিরুন পাঠ করলে তুমি শিরক মুক্ত থাকবে। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

আয়তুল কুরসি পাঠ করা

আমরা সবাই কম বেশি আয়াতুল কুরসির ফজিলত সম্পর্কে জানি। আয়াতুল কুরসি চিন্তা মুক্ত হতে এবং সকল বিপদ-আপদ থেকে আমাদের রক্ষা পেতে সাহায্য করে। রাসুলুল্লাহ(স.) নির্দিষ্ট কিছু সময়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে বলছেন। তার মধ্যে ঘুমানোর আগে পাঠ করার কথাও উল্লেখ আছে।

রাসুল(স.) বলেন, তুমি যখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে বিছানায় শয়ন করবে ঠিক তখন থেকে তোমাকে একজন ফেরেস্তা পাহারা দিবেন এবং শয়তান তোমার নিকট হতে দূরে থাকবে।(বুখারী,হাদিস:২৩১১)

সূরা বাকারা'র শেষ দুই আয়ত

সূরা বাকারা কে উম্মুল কোরআন বলা হয়। এটি কোরআনের সবচেয়ে দীর্ঘতম আয়াত বিশিষ্ট সূরা। এই সূরার ফাজিল সম্পর্কেও আমরা কম বেশি অবগত। তবে এই সূরার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত অধি।রাসুল(স.) বলেন,যে ব্যক্তি ঘুমানোর আগে সূরা বাকারা'র শেষ দুই আয়াত পাঠ করলো তার জন্য এই দুই আয়াত ই যতেষ্ট। (বুখারী, ৫০৪০)

ইস্তেকফার পাঠ করা

রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহ নিকট মাফ চাওয়া এবং দোয়া প্রার্থনা করা। আমরা সারাদিন নিজে জানা-অজানায় অনেক পাপ করে থাকি। ঘুমানোর আগে আল্লাহর কাছে তাই ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেননা রাতে ঘুমিয়ে সকালের আলো দেখতে পাবো এমন তো কোনো নিশ্চিতয়তা নেই।

সূরা মলুক পাঠ করা

সূরা মলুক এমন একটি সূরা যা যেকোনো ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন মহান রব্বুল আলামীন। এই নিয়ে রাসুল(স.) বলেন,কোরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে।যা কারো জন্য সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হবে। 

সূরাটি হলো: সূরা মলুক (তিরমিজি ২৮৯১)। হজরত আয়শা (আ.) হতে বর্ণিত, রাসুল (স.) কখনই সূরা মুলক পাঠ না করে ঘুমাতেন না। (তিরমিজি, ২৮৯২)

সর্বশেষে কালেমা পাঠ করে ঘুমানো

আমাদের ইসলামে বলা হয়েছে যে ব্যক্তি কালেমা পাঠ করে মৃত্যুবরণ করবেন কার জন্য জান্নাত নিশ্চিত। যেহেতু ঘুম মৃত্যু সমতুল্য। তাই ঘুমানোর আগে আমাদের সর্বশেষ কাজ হলো কালেমা পাঠ করা।যদি এই অবস্থায় আমরা মারাও যায় আমরা আল্লাহর কালেমা পড়া অবস্থা মৃত্যুবরণ করতে পারবো।

সর্বশেষ কথা

আশা করি রাতে ঘুমানোর আগে আমল সম্পর্কে আর কোন সমস্যা নেই। কেননা আমরা এই পোস্টে রাতে ঘুমানোর আগে আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমাদের এই দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে হলে আবশ্যই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দেওয়া নির্দেশ মতো চলতে হবে। 

আমরা অনেকে আমল করতে চাই কিন্তু হাদিস না জানার ফলে ঠিক মতো আমল করতে পারি না। আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবে।দোয়া প্রার্থনা করি,আল্লাহ সবাইকে ইমানের সহিত কবুল করুক আমিন।
Bloggbine.com

Help us to visit Bloggbine.com Regular. If any Questions please let us know by our contact page, Thank you.

Post a Comment

Previous Post Next Post