![]() |
কাজে মন বসানোর উপায় বা মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় |
আস্সলামু আলাইকুম। আপনার কি কোনো কিছুতে মন বসছে না। কোন কাজে ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারছেন না? সবদিক অগোছালো মনে হচ্ছ? সব কিছু থেকে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে? এভাবে মনোযোগ বিচ্ছিন্নর ফলে আমাদের মূলত কোনো কাজেই মন বসে না। যার ফলে আমরা কোনো কাজেই সুন্দর, গোছানো ভাবে সম্পূর্ণ করতে পারি না।
যার ফলে আমরা সমাজে ব্যর্থ মানুষে পরিণত হয় এবং পরিবার-আত্নীয়স্বজন সবার কাছে অবহেলার প্রাত্রে পরিণত হয়। আমরা যে কাজ গুলো নিজের মন থেকে করতে পারি না সেই কাজ গুলো কখনও সুন্দর মতো সম্পূর্ণ হয় না। আমাদের মনযোগ বিচ্ছিন্ন হলে সেই কাজে আমাদের অনীহা দেখা যায়।
আমরা তা নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি তবে এতে আরো আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই আজ আমি আপনাদের মাঝে এমন কিছু উপায় শেয়ার করতে চলেছি যা আপনাদের যেকোনো কাজে মনোযোগী হতে সহায়তা করবে। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক।
এক নজরে কাজে মন বসানোর সব উপায় গুলো দেখে নেই
- যেই কাজটি করবেন তা মন থেকে করবেন
- কাজ শুরু করার আগে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা
- কাজ শুরুর আগে প্রয়োজন মতো খাবার খেয়ে কাজ শুরু করা
- কাজ শুরুর আগে তালিকা তৈরি করা
- পানীয় পান করা
- কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া:
- চিন্তা মুক্ত থাকা
- আনন্দের সাথে কাজ করা
- বুঝে কাজ করা
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
- কাজের সময় বিশৃঙ্খল পরিবেশ হতে দূরে থাকা
- কাজের সময় মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা
- স্ট্রেট হয়ে কাজ করা
- কাজের সময় মোবাইল দূরে রাখা
- কমফোর্ট জোন তৈরি করা
- কাজ শুরুর আগে ধারণা নেই
যেকোন কাজে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য উপায় সমূহ
আমরা বেসিরভাগ মানুষই কাজের প্রতি অমনোযোগী। আর এই জন্য আমাদেরকে জানতে হবে কাজে মন বসানোর উপায় বা মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় গুলো সম্পর্কে। নিচে আমরা কয়েকটি উপায় দিয়েছি যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা কাজে মনোযোগ আনতে পারবেন।
যেই কাজটি করবেন তা মন থেকে করবেন
মনের বিরোধীতা করে কোনো কাজেই মানুষ সফল হয় না।সফল হতে হলে মনের জোর লাগে। যে কাজ আমরা মনের সন্তুষ্টে করি সেই কাজ দ্রুত শেষ হয় এবং সেই কাজে আমরা সফলতা লাভ করি।তাই মনের পছন্দের কাজ করা। কাজের সময় টাকার চিন্তা করা যাবে না। ভবিষ্যৎ একবার ভেবে তারপর সেই কাজে আঠার মতো লেগে থাকতে হবে। তাহলে সফলতা আসবেই। তাই মনোযোগ সহকারে মন থেকেই কাজ করতে হবে। কেউ জোর করেছে বলে কাজ করছি এমন টা করা যাবে না বা ভাবা যাবে না। নিজের মনে করে কাজ করলে সেই কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং কাজে সফলতা আসবে।
কাজ শুরু করার আগে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা
সাইকোলজির মতে, যেই সব মানুষ হাঁটাচলা বেশি করে তাদের বুদ্ধি মাত্রা অধিক এবং মস্তিষ্ক অধিকমাত্রায় সক্রিয় হয়ে থাকে। তাছাড়া হাঁটলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালনে কোনো প্রকার ব্যঘাত না ঘটার কারণে আমাদের স্নায়ু শক্তি সচল হয়। যা আমাদের মস্তিষ্ককেও সচল হতে সহায়তা করে। তাই পড়ালেখা বা যেকোনো কাজের পূর্বে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করা ভালো এতে সেই কাজের প্রতি আগ্রহ এবং মনোযোগ দুটোই বৃদ্ধি পায়।
কাজ শুরুর আগে প্রয়োজন মতো খাবার খেয়ে কাজ শুরু করা
কোনো কাজ করতে হলে অবশ্যই শান্ত হতে হবে।কিন্তু আমাদের খিদার জ্বালা খুব প্রখর যা আমাদেরকে শান্ত হয়ে হতে দেয় না। আমাদের চটপট প্রকৃতির করে তুলে। তাই কোনো কাজ করার পূর্বে অবশ্যই প্রয়োজন মতো খেয়ে ওই কাজটি করতে হবে।
কাজ শুরুর আগে তালিকা তৈরি করা
কোনো কাজ করার পূর্বে তা তালিকাভুক্ত করা। কোন কাজ,কখন,কিভাবে,কত সময়ে সম্পূর্ণ করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করা। ব্যবসায় হতে শুরু করে সব কাজেই কার্য পরিচালনা করতে আগে কাজটির জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। তাই কাজের পূর্বে কাজটির একটি তালিকা তৈরি করে কাজ শুরু করা।
পানীয় পান করা
জীবনের অপর নাম পানি। পানি আমাদের মস্তিষ্কে সচল রাখে এবং আমাদের মেধাশক্তি প্রখর করে তুলে। পানি পান করা শরীরের জন্য যেমন উপাকারি তেমন মনের জন্যও পানি উপাকারি। পানি আমাদের অস্থিরতা ভাব দূর করে আমাদের মস্তিষ্ককে শান্ত হতে সাহায্য করে। তাই যেকোনো কাজের ফাঁকে পানি পান করা। পানি পান করার ফলে আমাদের মস্তিষ্ক এবং মন দুটোই শান্ত থাকে। আমাদের কাজে মনোযোগী হতে সহায়তা করে এবং দ্রুত কাজ শেষ করতে সাহায্য করে।
কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া:
একনাগাড়ে কাজ করতে থাকলে আমাদের মাঝে বিরক্তি বা ক্লান্তি দেখা যায় যা আমাদের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং আমাদের কাজে ব্যঘাত ঘটায়। ধীরে সুস্থ বিরতি নিয়ে কাজ করলে আমাদের মাঝে আর বিরক্তবোধ প্রকাশ পায় না। আমরা সম্পূর্ণ মনোযোগের সহিত কাজ করতে পারি।
চিন্তা মুক্ত থাকা
কাজ করার আগে আমরা কাজটি নিয়ে অনেক চিন্তা করি। যার ফলে আমাদের মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়।এতে আমরা কাজে অমনোযোগী এবং চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ি এবং আমাদের কাছে কাজটি আরো জটিল হয়ে পড়ে। তাই সুন্দর এবং গোছানো ভাবে কাজ করতে সব কিছু কাজের পূর্বে পরিকল্পনা করতে হবে এবং চিন্তা হতে বিরত থেকে কাজ করতে হবে।
আনন্দের সাথে কাজ করা
রাগ বা মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করলে তা কখনই সুন্দর এবং গোছানো ভাবে করা যায় না। তাই সবসময় কাজ করার আগে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত এবং ফরফুরে মেজাজের করে নিতে হবে। এতে কাজে আমাদের মনোযোগ বাড়ে এবং তা আমরা শৃঙ্খলা সহিত শেষ করতে পারি।
বুঝে কাজ করা
কোনো কিছু না বুঝে করতে গেলে কাজটি আমাদের কাছে কঠিন হয়ে যায়। যার ফলে আমরন সম্পূর্ণ মনোযোগ স্থাপন এবং কাছের প্রতি করতে পারি নাকাজে। তাই প্রতিটি কাজ বুঝে আনন্দের সাথে সম্পূর্ণ করতে হবে। এতে কাজটি অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করা যায় এবং কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো
কোনো কাজ করতে গেলে ঝিমানো বা ঘুমের জন্য কাজে মনোযোগ থাকে না। আর পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমালে মাথা ব্যথা মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় যার ফলে কাজে মনোযোগ আসে না। জোরপূর্বক কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় কাজ গুলো বিশৃঙ্খল ভাবে সম্পূর্ণ হয়। তাই কাজ শুরু করার আগে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো।
কাজের সময় বিশৃঙ্খল পরিবেশ হতে দূরে থাকা
যেকোনো কিছুতে মনোযোগ স্থাপনের জন্য শান্ত পরিবেশ দরকার। শান্ত পরিবেশে আমাদে মস্তিষ্ক শান্ত থাকে।রাস্তার গাড়ির হর্ন,কলকারখানার মেশিনের শব্দ বাহ মানুষের কলরব আমাদের মস্তিষ্কে বিকৃত করে।যার ফলে আমরা কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারি না। তাই আমাদের কাজ করার জন্য প্রকৃতি ঘনিষ্ঠ শান্ত পরিবেশ নির্বাচন করা উচিত।
কাজের সময় মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা
মোবাইল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস। যা মানব মস্তিষ্ক খুব সহজে হ্যাক করে নেয়।আপনার মনোযোগ খুব সহজে অন্যদিকে স্থানান্তরিত করতে পারে।তাই কোনো কাজ শুরু করার আগে মোবাইল বা সামাজিক সাইড ব্যবহার হতে দূরে থাকুন।এতে আপনার মনযোগ স্থাপিত হবে এবং আপনার কাজ করতে সহজ হবে।
স্ট্রেট হয়ে কাজ করা
শুয়ে কাজ করলে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয় এবং অলসতা কাজ করে। এতে কাজের গতি হ্রাস পায়। অন্য চিন্তা মাথায় এসে ভীড় করে।যার ফলে আমাদের কাঝে ব্যঘাত ঘটে। আমরা কাজে অমনোযোগী হয়ে বিশৃঙ্খল ভাবে কাজ সম্পাদন করে থাকি। তাই স্ট্রেট হয়ে আরাম দায়ক কমর্পোটেবল চেয়ারে বসে কাজ করুন।
কাজের সময় মোবাইল দূরে রাখা
কাজে মনোযোগী হতে আপনার মোবাইল থেকে দূরে থাকা টা বিশেষ কাজ দিবে। কেননা মোবাইল খুব নিখুঁত ভাবে তার আসক্তিতে জড়িয়ে নিতে পারে আমাদেরকে। সাম্প্রতিক একটি স্ট্যাডিতে প্রকাশিত হয়েছে,যে কোনো কাজে মন স্থির করতে না পারা,সব দিক অগোছালো মনে হওয়া, অধিক চিন্তায় ডুবে থাকা এসব অতিরিক্ত মোবাইর ফোন ব্যবহারের কারনেই হয়ে থাকে। তাই কোনো কাজে মনোযোগী হতে হলে অবশ্যই আপনার মোবাইল ফোনটি নিজের থেকে দূরত্বে রেখে কাজ শুরু করতে হবে।
কাজ শুরুর আগে ধারণা নেই
হুট করে কোনো কিছু আরম্ভ করলে তা সহজে আমাদের বোধগম্য হয় না বা আমরা তার সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। তাই যেকোনো কাজ শুরুর আগে অবশ্যই সেই কাজের বিষয়ে স্ট্যাডি করে জানতে হবে তা কিভাবে করলে সহজে করা যাবে। এই ক্ষেত্রে আগাম ধারণার ফলে আমাদের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। এবং আমরা সেই কাজে খুব সহজে মনোযোগ স্থাপন করতে পারি।
কমফোর্ট জোন তৈরি করা
এমন স্থানে বসে কাজ শুরু করতে হবে বা কাজ করতে হবে। যেনো আমাদের শারীরিক বা মানসিক কোনো প্রকার চাপ সৃষ্টি না হয়। কাজ করার স্থান সবসময় পরিষ্কার রাখা।এতে কাজ করার আগ্রহ ও মনোযোগ দুটোই বাড়ে।আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে এমন স্থানে কাজ করা। কেননা আলো বাতাস বিহীন স্থান আমাদের অস্থির প্রকৃতির করে তুলে। ফলে কাজে মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে।
কাজে মন বসানোর উপায় বা মনোযোগ বৃদ্ধির উপায়ঃ এভাবে নিয়ম মেনে সকল কাজ করলে আশা করা যায় আপনার সব কাজেই মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। আর এইভাবে কাজ করে গেলে আপনার মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আশা করি উপরের মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় গুলো আপনাদের ভালো লেগেছে।
উপসংহার
প্রতিটি কাজই আমাদের দায়িত্ব। আর দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে ফরজ কাজ। যেকোনো কাজ মনযোগ সহকারে সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পূর্ণ করা আমাদের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বে যেন বিশৃঙ্খলা কিছু দেখা না দেয় তাই আমাদের প্রতিটি কাজ মনোযোগ সহকারে করতে হবে।কাজের মান যত ভালো মানুষের কাছে আপনার তত সম্মান। সেই সম্মান অর্জনে সহায়তা করতে আমি আপনাদের কাজে মনোযোগ বাড়ানোর টেকনিক শেয়ার করেছি আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন
Tags:
Info