![]() |
দিনলিপি লেখার নিয়ম বাংলা ২য় পত্র | নমুনা দিনলিপি সহ |
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক, আশা করি ভালো আছেন। আপনি কি বানলায় দিনলিপি লেখার নিয়ম জানতে চান? তাহলে এই পোস্ট টি পড়ুন। এই নিবন্ধে আমরা বাংলায় দিনলিপি লেখার নিয়ম সম্পর্কে সকল আলোচনা করেছি।
আমাদের জীবন থেকে একটি দিন চলে যাওয়া মানেই সেটি অতীত হয়ে যাওয়া। কেউ কেউ দিন গুলো জাঁকজমক ভাবে উপভোগ করে কাটায় আবার কেউ কেউ একটু খারাপ সময়ে কাটায়। এই একেকটি দিন একেক জনের কাছে একেক রকম হয়ে থাকে যার জন্য তারা তাদের দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে দিনটি ডায়েরির পাতায় লিখে রাখে আর ডায়েরি লেখার নিয়ম একেক জনের কাছে একেক রকমের হয়ে থাকে। আর এই ডাইরি লেখাকে ব্যাকরণের ভাষায় দিনলিপি বলা হয়। আজকে আমাদের পোস্টের মেইন টপিক হলো এই দিনলিপি।
দিনলিপি কি বা দিনলিপি কাকে বলে?
ইংরেজি ডাইরি শব্দটি নেওয়া হয়েছে ল্যাটিন শব্দ (Diarium) হতে। এই শব্দটির বাংলা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ব্যাক্তিগত দিনের জীবনযাত্রার কাহিনী যাকে আমরা দিনলিপি বলে থাকি। আবার ফারসি ভাষায় রোজনামচা কে দিনলিপি বলা হয়। মানে দিনলিপি হচ্ছে মুলত মানুষ তার প্রত্যেক দিনের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ডায়েরি তে লিখে স্মৃতি করে রাখে তাই।
দিনলিপির শুরুর কথা
গবেষক রা মনে করেন দিনলিপির প্রচলন অনেক আগে অর্থাৎ আদিকাল থেকেই। কিন্তু এই কথাটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি। দিনলিপি লেখার সম্পর্কে আসল তথ্য পায় দশম শতাব্দিতে। পাশ্চাত্য দিনলিপি জনপ্রিয়তা লাভ করে রেনেসাঁ যুগে। ১৬৩৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয়া ( সেমুয়েল পেপিসকে) বলা হয় দিনলিপির শেক্সপিয়ার।
ঊনবিংশ শতাব্দীতে কাগজের বৃদ্ধির সঙ্গে দিনলিপি আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নস্যি বাহিনীর অত্যাচারের দিনগুলোতে লিখে রাখা এনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির ঐতিহাসিক মূল্য আজ জনপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের কাটানো দিনলিপি নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে । বইটির নাম হচ্ছে কারাগারের রোজনামচা।
দিনলিপির গুরুত্ব
দিনলিপি হলো আমাদের মনের কথা প্রকাশ করার একটি গুরত্বপূর্ণ মাধ্যম। আমাদের প্রতিটা দিনের জীবনে এক নিঃস্বার্থ বন্ধু। একসময় কাছের মানুষ, বন্ধু, প্রয়োজন সবাই ছেড়ে চলে যায়। যাদের সাথে মনের দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ ভাগবকরে নিতাম তারাই ব্যাস্ততার ভিড়ে একসময় হারিয়ে যাবে। তখন আমাদের পাশে বসে আমাদের সেই কথাগুলো শুনবে দিনলিপি। দিনলিপি আমাদের সঙ্গে থেকে যাবে।
আমাদের প্রতিটা দিনের কাজকর্ম পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠে দিনলিপির মধ্যে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি, নতুন আচরণ মূল্যবোধ তৈরি আর নতুন ভাবে আস্থাবান হতে সাহায্য করে। এই জন্যই দিনলিপির গুরুত্ব অপরিসীম।
দিনলিপি লিখার নিয়ম
আমাদের অনেকেরই অনেক প্রয়োজনে দিনলিপি লেখার প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেকসময় আমরা জানিনা দিনলিপি লেখার নিয়ম কি। তাই নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে পারি।
- ১. দিনলিপি লেখার সময় একটা বিষয় নিয়ে সবসময় লক্ষ্য রাখা দরকার, যে সবসময় ' নিজেকে ব্যবহার করা। সবসময় সত্যি কথা বলা। দিনলিপি মিথ্যা লেখা যায় নাহ তাই না লেখাই শ্রেয়।
- ২.প্রতিদিনের মূল পয়েন্ট কাজকর্ম দিনলিপি উল্লেখ্য করা। দিনলিপি একান্তই ব্যক্তিগত রচনা, তাই সেখানে নিজের অভিজ্ঞতা খোলামেলা ভাবে আলোচনা করা যায়। দিনলিপি সহজ ভাষায় লিখা ভালো। তবে, তা হতে হবে অনুসরণীয়, অনুকরণীয় আর আকর্ষণীয়। তাই দিনলিপি লিখতে গেলে অবশ্যই ভাষার মর্যাদা রক্ষা করা প্রয়োজন।
- ৩.দিনলিপি গল্পের আকারে লিখলেই বেশি সুন্দর ভাবে ফুটে উঠে ।
- ৪.নিজেদের বিশেষ দিন বা মনে রাখার মত একটি দিন সাধারণ দিনের দিনলিপি থেকে আলাদা ও আকর্ষণীয় হবে। কারণ সেইটা বিশেষ দিন এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
- ৫. দিনলিপি লিখার প্রথমেই তারিখ, সময়, স্থান প্রকাশ করলে ভালো হয়, এর মাধ্যমে ঘটনার দিন, তারিখ ও সময় সম্পর্কে জানা যায়।
- ৬.দিনলিপি লিখার দিনটির প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনার বর্ণনা সংক্ষেপ আকারে লিখতে হবে।
- ৭.ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পরিচয় দিতে হবে। ব্যাক্তিগত অভিমত বা বিশ্লেষণ দিতে হবে।
- ৮. দিনলিপি কয়েকদিনের হতে পারে, তাই তারিখ সময় এরটা সময় সঠিক ভাবে দিতে হবে।
আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে ২ টি উদাহরণ বা দিনলিপি লেখার নিয়ম নমুনা দেওয়া হলো!
প্রশ্নঃ কলেজের প্রথম দিন সম্পর্কে একটি দিনলিপি লেখো।
১/ কলেজের জীবনের প্রথম দিন
২ মার্চ,২০২২, বুধবার
রাত ১০টা, নবাবগঞ্জ।
আজ ছিলো কলেজ জীবনে আমার প্রথম দিন। ছোট সময় থেকেই এই দিনটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ও সপ্ন ছিলো। বড় ভাই-বোনেরা যখন কলেজ যেতো তখন থেকেই মনের ভিতর কলেজ নিয়ে এক ফেন্টাস্টি তে ভুগতাম। শুধু মনে মনে ভাবতাম আমিও একদিন কলেজে পড়ব যেখানে স্কুল এর মত এত কড়াকড়ি ভাব থাকবে নাহ। নিজের স্বাধীনতা প্রকাশ হবে। এন্ড্রোয়েড ফোন ব্যবহার করবো কত কি তার হিসাব নেই। আর আজ সেই বহু অপেক্ষার পর কঙ্ঘিত দিনটি আসলো আমার কলেজের জীবনের প্রথম দিন, আজ আমার সপ্ন পূরণ হয়েছে।
রাত টুকু শেষ হলে কালকে কলেজে যাবো এই উত্তেজনায় কাল রাতে ঠিক মত ঘুম টাই হয় নি। শুধু মনে হত কেমন হবে কলেজ, স্যার, ম্যাডাম, স্টুডেন্ট'রা। নতুন পরিবেশে কিভাবে মানিয়ে নিবো, কিভাবে সময় করবো, সবার আচরণ কেমনই বা হবে। এই ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে পড়ি নিজেও জানতাম নাহ। প্রায় ভোরে, যখন আলো ফোটেনি, সূর্য তার ঝলক এর চতে ফোঁটাও দেখায় নি। ফজর এর ওয়াক্তে ঘুম ভাঙলো। সালাত আদায় করে, কুরআন তিলাওয়াত করে, জানালা খুলে দিলাম বাইরের একটু আবহাওয়া উপভোগ করতে। তারপর একটু বাগানে যেয়ে হাঁটাহাঁটি করেই রুমে চলে আসি। গোসল শেষ করেই নাস্তা শেষ করে কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম। বের হবার সময় পরিবারের সকলের কাছে দোয়া চেয়ে নিলাম সালাম দিয়ে বের হয়ে পড়লাম কলেজে যাওয়ার উদ্দেশে।
বাসা থেকে কলেজ অনেক দূরে হওয়াতে বাসে করে যেতে হয়েছে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট লেগেছিলো। বসে থেকে নেমে উৎকণ্ঠার সাথে কলেজে প্রবেশ করি। কলেজ গিয়ে আমার পরিচিত অনেকের দেখা পেয়ে যায় এর জন্য মনে একটু শান্তির ঢেউ খেললো। অপরিচিত সবার মাঝে নিজেকে কেমন যেনো লাগছিল ওদের পাওয়ার পর পরই শান্তি পেলাম।
যথাসময়ে ক্লাস শুরু হয়, শিক্ষকরা নানান নীতিমুলক কথা বললেন, শিক্ষণীয় ও উপদেশমূলক কথাও বলেছেন। এই কথা গুলো আমাকে জীবনের লক্ষ নির্বাচনে সাহায্য করেছে। স্কুলের দেয়াল পার করে এই প্রথম আমি স্বাধীন, মুক্ত ভাবে জীবন উপভোগ করার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছি। এই স্বাধীন জীবন যেনো কোনো ভুলের বশবর্তী হয়ে নষ্ট নাহ হয় কোনো কালো দাগ নাহ পরে এই কথা গুলোই শিক্ষক রা বলছিলো এবং এই শিক্ষা দেওয়ার জন্য মূলত এত কথার আবির্ভাব ঘটেছে।
আজকে আমার ভালো লেগেছে আইসিটি স্যার এর কথা। তিনি এসেই তার পুরো মূল পরিচয় টা বলে দিলেন এবং বন্ধু ন্যয় আচরণ করলেন আর সবাইকে বললো আমরা যেনো তাকে বন্ধুই মনে করি। তিনি বললেন আজ সবার সাথে পরিচয় গল্প করবে, পড়াশোনা করবে নাহ তবে h.w দিয়ে দিবে। তার ব্যবহার ছিলো একদম অমায়িক । তিনি গল্প গল্পেই আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবার কিছু টিপস দিয়েছেন। তার প্রত্যেক টা করণীয় সম্পর্কের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন যে একদম আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। আর আমিতো মনে মনেই আমি ভবিষ্যৎ লক্ষ্মী স্থির করে ফেলি।
আগে শুনতাম শিক্ষক টা নাকি মানুষ গড়ার দ্বিতীয় কারিগর যা আজকে নিজের চোখে প্রমাণ পেলাম আর ভালো ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। আজকে মোট ৪ টা ক্লাস হয়েছে আর সবাই খুবই অমায়িক ব্যবহার করেছেন। প্রতিটা শিক্ষক তাদের নিজেদের পরিচয় দিয়া আমাদের সাথে ভালো করে কথা বলেছেন। আমাদের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য কিনকি করণীয় টা বিভিন্ন পরামর্শ ও উদাহরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন। ক্লাস শেষে আরো মেয়েদের সাথে পরিচিত হয় আমার।
তারা আগামীকাল ক্লাসে একসাথে বসার জন্য অনুরোধ করলো কারণ সবাই অপরিচিত এই জন্য। দুপুরে যখন বাসায় ফিরছিলাম তখন সারাটা রাস্তা স্যার ম্যাডাম দের নীতিমূলক কথা ভাবছিলাম তারা আসলেই মানুষ গড়ে তোলার দ্বিতীয় কারিগর। আমি সেইদিন বুঝে গিয়েছিলাম জীবনের সংগ্রামে জয়ী হতে হলে পড়ালেখার কোনো বিকল্প নেই। বাসায় ফিরে আমি আমার পরিবর্ত হয়তো লক্ষ্য করেছিলাম। বাসায় আসার সাথে সাথে আম্মু এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর সরবত দিয়ে ফ্রেশ হতে বলে চলে গেলেন।
আমিও খাওয়া শেষ করে ফ্রেশ হয়ে জোহর এর সালাত আদায় করে, দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ভাবছিলাম আজকের দিনটা স্মরণীয় করে রাখা দরকার তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ঘুম রাত ১০ টায় সবাই ঘুমানোর পর আজকের দিন নিয়ে দিনলিপি লিখবো। আজকের দিনটা আমারব জিবনে একটি স্মরণীয় দিন। আমার এই কলেজ জীবনের প্রথম দিনটি সবসময় মনে থাকবে।
২/ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন:
২ নভেম্বর, ২০২১
রাত ১০টা, রাজশাহী।
আজ আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। আজকে আমার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন। ভোর ৪ টায় উঠে ফজরের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম আমার পরীক্ষা যেন সহজ হয় এবং আমি যেন মা বাবার মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। এরপর সকালে হাল্কা নাস্তা করেই পড়তে বসলাম। দাগানো নোট গুলো রিভাইজ দিতে লাগলাম। দেখতে দেখতে ৯ টা বেজে গেলো।
এরপর দাদা দাদু মা বাবার কাছে দোয়া চেয়ে রওনা হলাম পরীক্ষার হলের উদ্দেশ্যে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা বিধায় রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। বাসা থেকে ৯ টা ২০ মিনিটে বের হয়েছি হলে আসতে সময় লেগেছে ২৫ মিনিট এর মতো। এরপর গেইটে বান্ধবি সুরাইয়ার সাথে দেখা হয়ে গেলো।
আজ প্রথম পরীক্ষা তাই একটু ভয় কাজ করছিলো কিন্তু বাংলা পরীক্ষা বিধায় আবার সাহস ও ছিলো। আমার হল রুম খুজে চলে গেলাম হলে। হলে ঢুকতেই আমার বান্ধবি সৃতি ডেকে আমার সিট টি খুজে দিল। ওর আর আমার সিট একজায়গায় পরছে। এরপর স্যার এসে আমাদের খাতা এবং প্রশ্ন দেওয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা শুরু করে দিলেন। প্রশ্ন হাতে পেয়ে কয়েকবার ভালো করে পড়ে নিলাম এবং সহজ প্রশ্ন গুলো দাগিয়ে সেগুলো উত্তর করতে লাগলাম।
আলহামদুলিল্লাহ্ সকল প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দিতে পেরেছি। এরপর পরীক্ষা শেষের ঘণ্টা বাজলো। পরীক্ষা শেষে বান্ধবীদের সঙ্গে একটু আড্ডা দিলাম। এরপর বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুম দিলাম। তারপর বিকালে একটু গল্পের বই পরলাম তারপর আবার সন্ধায় পরবর্তী পরীক্ষার জন্য পড়তে বসে গেলাম। এভাবে আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিন কেটে গেলো।
উপসংহার
মানুষের জীবনের ভালো অভ্যাসগুলোর মধ্যে একটি হলো দিনলিপি লেখা। দিনলিপি হচ্ছে যা নিজেকে যাচাই করার সুযোগ করে দেয়। এজন্য দিনলিপি রচনায় আমরা যতোই মনযোগী হবো ততোই লাভ। প্রতিদিনের দিনলিপি না লিখতে পারলেও বিশেষ দিন গুলো লিখে রাখায় ভালো। আবার অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষাতে দিনলিপি লেখার প্রয়োজন হয়। তাই দিনলিপি লেখার নিয়ম গুলো অবশ্যই জেনে রাখতে হবে আমাদের। আজকের পোস্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন, এবং আমাদের পোস্ট গুলো নিয়মিত পড়বেন। ফি-আমানিল্লাহ
Tags:
Education