ভালবাসার মরশুম (পর্বঃ ০১) | রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প | শারমিন আহমেদ সাথী

ভালবাসার মরশুম পর্ব ০১

আপনারা অনেকেই রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প পছন্দ করেন, কাজের ফাকে অবসরে গল্প পড়ে মনে রস আনতে আমরা গল্প পড়ি। 

ভালবাসার মরশুম ঠিক তেমনই এক গল্প। আশা করবো মনোযোগ দিয়ে গল্পটি পড়বেন তাহলেই লেখিকার গল্পের ভাব বুঝতে পারবেন। চলুন তাহলে গল্প টি শুরু করি। 

ভালবাসার মরশুম

ঘড়িতে রাত ১১ টা বেজে ২৭ মিনিট। চারিদিকে শুনশান নীরবতা। আকাশে পূর্নিমার চাঁদ। সেই চাঁদের আলোতে বেলকনিতে বসে গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলছে ২৪ বছরের সুদর্শন এক যুবক। ঠোঁটে লেগে আছে তার মিষ্টি হাসি। মনের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

৩ বছর পর নিজ দেশে ফিরেছে সে। অবশ্য খুশির মূখ্য কারণ নিজ দেশে ফেরা নয়, কারণটা হলো এই যে এতটা অপেক্ষা আর পাগলামির পর তার ছোট বউ সত্যি সত্যি তার হতে যাচ্ছে। 

গল্পে এই যে সুদর্শন যুবকটি, তার নাম হলো রুদ্র চৌধুরী! বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। নিশ্চয়ই ভাবছেন রুদ্রর ছোটবউটা আবার কে? রুদ্রর ছোট বউটা হলো তার চাচাতো বোন, মিসকাতুল মিথি!

রুদ্রর বাবা-রা দুই ভাই। রুদ্রর বাবা ও মিথির বাবা একসাথে এক বাড়িতেই থাকেন সাথে রুদ্রর বড়বউ।এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন রুদ্রর বড়বউটা আবার কে? হিহি! রুদ্রর বড়বউ হলো রুদ্র আর মিথির দাদিজান।

এবার গল্পে ফিরি!

কল্পনার শহরে হাজারো স্বপ্ন বুনতে ব্যস্ত রুদ্র ফোনে আসা মেসেজ এর শব্দে বাস্তবে ফেরে ।
ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে 'ছোটবউ' নামটি। ছোট করে কয়েকটি শব্দ গুছিয়ে মেসেজ পাঠিয়েছে
রুদ্রর ছোটবউ।

"ছাদে আসতে পারবেন একটু?আমি অপেক্ষা করছি!"

মেসেজ পড়ে হাসে রুদ্র। এই তিন বছরে তার ছোটবউ এর কত পরিবর্তন! আগে তুই-তুকারি, অনুমতি না নিয়ে কত কিছুই করেছে, আজ সেই অনুরোধ জানাচ্ছে। 

সন্ধ্যা পেরুতেই বাথরুমে যেতে যার আরেকজন গার্ড দেয়া লাগতো, আজ সে একা একা এই মাঝরাতে ছাদে! 

বেলকনি থেকে উঠে রুমে আসে রুদ্র। গিটারটা সোফায় রেখে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। ফর্সা গায়ে কালো শার্ট,শরীরটা আগের তুলনায় একটু শুকিয়ে গেছে,ফর্সা গালের ছোট ছোট দাড়িগুলো আগের তুলনায় একটু বড় হয়েছে, তাও মন্দ লাগছে না। 

নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয় রুদ্র। কপালে আসা সিল্কি চুলগুলো হাতের সাহায্যে পিছনে ঠেলে দিয়ে হাসিমুখে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

ছাদে গিয়ে রুদ্র দেখতে পায় ছাদের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে রূপবতী এক অষ্টাদশী কন্যা। লম্বা কুকরানো চুল গুলো মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে। চাঁদের আলো এসে মুখে পড়াতে আরো স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।

মিথি এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। আর রুদ্র গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে তাকে, তার ছোট বউকে। এগিয়ে গিয়ে মিথির পাশে দাঁড়ায় রুদ্র। মিথির এতোটাই ধ্যানে মগ্ন ছিল যে তার পাশে রুদ্রর উপস্থিতিও টের পাই নি।

হাতে পায়ে লম্বা হলেও, চোখে মুখে বাচ্চা বাচ্চা ভাবটা এখনো রয়েই গেছে মিথির। রুদ্র নিঃশব্দে হাসে।মিথির কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে ডাক দেয়, 'ছোটবউ'

ধ্যান ভাঙে মিথির। শব্দদুটো কানে আসতেই বুকের ভেতর কম্পনের সৃষ্টি হয়। পাশ ফিরে রুদ্রর দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। হাতের তালু ঘামতে শুরু করেছে। মানুষটা এতো কাছে! দূরে সরে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মিথি সরে যেতে পারে নাহ। হাত-পা এক জায়গাতেই স্থীর হয়েছে তার। 

শব্দদুটো মনে মনে আওরায় মিথি। লজ্জায় নতজানু হয়ে পড়ে। অস্বাভাবিক ভাবে হৃদস্পন্দন বাড়তে শুরু করেছে।

নিজের অবস্থা দেখে নিজেই অবাক হয় মিথি। কই আগে তো এমন হতো নাহ। রুদ্র তো আগে ছোটবউ ছোটবউ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো। যার কারণে মিথি রাগের চোটে কেদে কেদে তার বড় আম্মুর কাছে নালিশ দিত শুধু।

কিন্তু এটাও সত্যি রুদ্র বিদেশ যাওয়ার পর প্রতি মুহুর্তে মিস করেছে রুদ্রর 'ছোটবউ' বলে ডাকটা আগের মতো এখন আর রাগ লাগছে না মিথির, বরং নতুন এক অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। এগুলো কি শুধুমাত্র দূরত্ব বাড়ার কারণে? নাকি অন্যকিছু! বুঝতে পারে নাহ মিথি।

মিথিকে লজ্জায় মিইয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে হালকা কেশে রুদ্র বলে, 'মনে মনে বাসরের কথা ভেবে চলেছিস নাকি? ছি!ছি! মিথি!ইহা বড়ই লজ্জার বেপার!'

রুদ্রর কথা শুনে মিথি ফ্যালফ্যাল করে থাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। কথাটা মস্তিষ্কে পৌঁছতে একটু সময় লাগল। রুদ্রর কথার মর্ম বুঝে উঠতেই মিথি নাক মুখ কুচকে নিল। এই লোকটা তো এখন আরো বেশি নির্লজ্জ হয়ে গেছে। এমনিতেই কম ছিল আবার বিদেশের হাওয়া লেগেছে শরীরে।

নাক মুখ কুচকে রেখেই মিথি উত্তর দিল,

'ছি!আপনি ভালো হবেন না জীবনে!?

মিথির কথায় রুদ্র হাসলো। ভ্রু উচিয়ে আবার বলল,

'তোর আমাকে কোন দিক দিয়ে খারাপ মনে হয়?আমি একজন সহজ সরল সাদা দিলের মানুষ।'

রুদ্রর কথায় মিথি ভেংচি কেটে  উত্তর দিল,

'মোটেও নাহ। আপনি নিতান্তই একজন ঠোঁটকাটা আর নি*র্ল*জ্জ স্বভাবের লোক ছিলেন আর আছেন।'

রুদ্র এবার একটু শব্দ করে হাসলো। আসলেই তার ছোটবউটা এখনো বাচ্চাই আছে। সেই জন্যই তো আসার পর থেকেই রুদ্রের থেকে কেমন লুকিয়ে লুকিয়ে ছিল। বাসায় আসার পর শুধু একবার রুদ্র মিথিকে দেখেছে।

ওই যে একবার মিথির চোখাচোখি হলো রুদ্রের সাথে, তারপর থেকেই মিথিকে আর দেখতে পাইনি। মিথিকে দেখার জন্য রুদ্রর চোখ, মন সব যে তৃষ্ণার্ত ছিল তা অন্য কোন নারী হলে রুদ্রর চোখের চাহনিতে ঠিকি বুঝে নিত।

এই চোখের ভাষা পড়তে পারলে সে আর লুকিয়ে পালিয়ে বেড়াতো নাহ।কিন্তু রুদ্রর ছোটবউ তা বুঝে নি। রুদ্র দুষ্টুমি মাখা একটা হাসি দিয়ে বলল,

'এই ঠোঁটকাটা আর নি*র্ল*জ্জ স্বভাবের লোকটা কিন্তু দিনশেষে তোরই হবে।তাছাড়া আমি তো কিছু করিই নি তাই এই উপাধি দিয়ে দিলি, বা*স*র রাতের কথা তো,,,,'

রুদ্র কথাটা সম্পুর্ন করার আগে মিথি হাত দিয়ে রুদ্রর মুখ চেপে ধরল। এই লোককে আর কোন কথা বলতে দেয়া যাবে নাহ। নাহলে লজ্জায়ই মরে যেতে তাকে। রুদ্রকে ডেকেই ভুল করেছে সে।

মিথির ভাবনার মাঝেই রুদ্র চুমু খেল মিথির হাতে। মিথি চট করে রুদ্রর মুখ থেকে হাত সরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়াল। ভীষণ অস্থির লাগছে তার।

মিথির অবস্থা দেখে রুদ্র বাকা হেসে মিথির কাছে এগিয়ে গেল।এক সাথে জরিয়ে নিল মিথির কোমল কোমর। একটানে একদম কাছে টেনে নিল মিথিকে।তারপর বলল,

'এটুকুতেই তোর বেহাল দশা।আমার পুরো পাগলামিটা সইবি কি করে?

হাতে শুধু ছোট্ট চুমু খেয়েছি তাই হাসফাস করছিস।তোর ওই মিষ্টি ঠোঁটজোড়াতে চুমু,,,'

রুদ্রর কথা শেষ না হতেই রুদ্রর বুকে ধাক্কা দিয়ে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে দৌড়ে ছাদ থেকে পালালো মিথি। মিথির এ অবস্থা দেখে রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠল। যা সিরি দিয়ে নামতে থাকা মিথির কানেও পৌছালো।

------- পর্ব ০১ সমাপ্ত --------
Bloggbine.com

Help us to visit Bloggbine.com Regular. If any Questions please let us know by our contact page, Thank you.

Post a Comment

Previous Post Next Post