![]() |
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম |
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়মঃ আসসালামু আলাইকুম, আপনি কি বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানতে চাচ্ছেন? দরখাস্ত লিখতে চাচ্ছেন কিন্তু বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানেন না? কোন সমস্যা নেই, আজকের নিবন্ধে আমরা দরখাস্ত লেখার সকল নিয়ম আলোচনা করেছি। সম্পূর্ণ পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ার পরে আপনি দরখাস্ত লিখতে পারবেন আশা করি। তাই একটি দরখাস্ত লেখার আগে এই পোস্ট টি পড়ুন।
কিভাবে দরখাস্ত লিখলে পরিক্ষায় ১০ এ ১০ পাবেন বা কিভাবে দরখাস্ত লিখলে আপনার দরখাস্তটি গ্রহণযোগ্য হবে বা কিভাবে দরখাস্ত লিখলে আপনি চাকরিতে সিলেক্ট হবেন? সেই সম্পর্কেই আজকের পোস্টে আপনাদের জানাবো। দরখাস্ত লেখাটা অনেকের কাছে তরল পানীয়র মতো সহজ আবার অনেকের কাছে হিমালয় পর্বতের বরফের ন্যায় কঠিন। কঠিন হওয়ার কারন হচ্ছে বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম না জানা। তাই আমাদের কে দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানতে হবে।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম কেন জানতে হবে জেনে নিন
বাংলায় দরখাস্ত বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- ছুটির জন্য দরখাস্ত, আর্থিক অনুদানের জন্য দরখাস্ত, অনুপস্থিতির জন্য ছুটি চেয়ে দরখাস্ত, বৃত্তির জন্য দরখাস্ত ইত্যাদি। এসব দরখাস্ত গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য কিছু নিয়ম অনুসরণ করে দরখাস্ত লিখতে হয়, নয়তোবা তা গ্রহন করা হয় না। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক ক্ষেত্রে আমরা দরখাস্ত প্রেরণ করে থাকি।
যেমন-কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য দরখাস্ত, কোনো গুন্যমান্য ব্যক্তির নিকট কোনো কাজের জন্য অনুমতি চাওয়া কিংবা কোনো সেবা গ্রহণের লক্ষ্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিকট আমরা এই দরখাস্ত প্রেরণ করে থাকি। আবার যখন আমরা স্কুল বা কলেজে পরিক্ষা দিতে যায় তখন দেখা যায় একাধিক দরখাস্ত মুখস্থ করে যায় তবুও আশানুরূপ আমরা পরিক্ষায় ভালো নাম্বার পায় না, নয়তো বা দেখা যায় একাধিক বার শিখার পরও আমরা পরিক্ষণ কক্ষে গিয়ে দরখাস্ত লিখার নিয়ম ভুলে যায়।
তাই বিশৃঙ্খল ভাবে আমরা দরখাস্ত লিখে দিয়ে আসি। আবার অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষক বা উচ্চপদস্থ কোনো ব্যক্তির নিকট অগোছালো ভাবে দরখাস্ত প্রেরণ করাই তারা তা প্রত্যাখান করে। আপনাদের আজ এসব সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। দরখাস্তের গ্রহনযোগ্যতা বাড়াতে এবং আদর্শ ভাবে দরখাস্ত লিখতে আমাদেরকে বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানতে হবে।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম এক নজরে
- আবেদনের তারিখ লেখা
- বরাবর লেখা
- প্রাপক এর পদবি লেখা
- প্রাপকের প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা
- আবেদনের বিষয় লেখা
- জনাব বা জনাবা লেখা
- আবেদন এর বিষয় বর্ণনা করা
- নিবেদক লেখা
- আবেদনকারীর সম্পর্কে লেখা
বাংলা দরখাস্ত লেখার সকল নিয়মাবলী
বাংলা দরখাস্ত বা আবেদন পত্র লিখতে হলে আমাদেরকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মেনে দরখাস্ত লিখতে হয়। নিচের নিয়ম গুলো অনুসরণ করে একটি আদর্শ দরখাস্ত লেখা যায়। যেমনঃ
১. পৃষ্ঠা বা পেইজের মান ও সাইজ
প্রথমেই আপনাকে দরখাস্ত লেখার সময় পৃষ্ঠার মানের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা আপনার দরখাস্ত সুন্দর হওয়ার একটি প্রধান কারণ হলো আপনার পৃষ্ঠা। আপনার পৃষ্ঠাই আপনার দরখাস্তের প্রাথমিক মাধুর্য বহন করে। তাই প্রথমে পৃষ্ঠার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে A4 সাইজের সাদা পৃষ্ঠা দরখাস্ত লিখার জন্য সেই হিসেবে উপযোগী বলে মনে করি আমি।
২. কলম/পেন্সিল ব্যাবহার
পেন্সিল দিয়ে দরখাস্তে তেমন কোনো কাজ নেই বলতে গেলে।তবে মার্জিন করার সময় পেন্সিল ব্যবহার করায় উত্তম। আর এটাই নিয়ম পেন্সিল দিয়ে মার্জিন করার। সাধারণত আমরা কলম দিয়ে লিখে থাকি সেই হিসেবে দরখাস্তও কলম দিয়ে লিখায় ভালো। তবে কোনো রঙিন কলম দিয়ে দরখাস্ত না লিখায় ভালো। কালো কালির কলম ব্যবহার করাই উত্তম। এতে দরখাস্তের সৌন্দর্য বজায় থাকে।
৩. মার্জিন টানা
পৃষ্ঠার মার্জিনের দিকে লক্ষ্য রাখা টা বিশেষ জরুরি। মার্জিন যদি বাঁকা হয় তবে আপনার পৃষ্ঠা এবং দরখাস্ত দুইটারই সৌন্দর্য নষ্ট হবে। আবার মার্জিন হাতের লেখাকে সোজা করতে এবং সুন্দর করতে সাহায্য করে। এক লাইনের পর দ্বিতীয় লাইনটি সোঁজা হচ্ছে কিনা তা আমরা মার্জিনের সাহায্যে বুঝতে পারি। তাই বাংলা দরখাস্ত লেখাত সময় মার্জিন করতে হবে সোঁজা এবং খাতার দুই পাশে। উপরের দিকে মার্জিন করার সাধারণ নিয়ম হলো এক স্কেল সমপরিমাণ জায়গায় মার্জিন করা। এবং বাম পাশে এক স্কেল এর একটু কম পরিমাণ অংশ নিয়ে মার্জিন করা।
৪. এক পৃষ্ঠায় দরখাস্ত লেখা
দরখাস্তের সৌন্দর্য রক্ষার্থে অবশ্যই এক পৃষ্ঠায় দরখাস্ত সম্পূর্ণ করতে হবে। এটি দরখাস্ত লেখার সর্বপ্রধান একটি সৌন্দর্য সৃষ্টি কারী উপাদান। কারণ এটি শব্দের সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে দরখাস্ত কে মানানসই হতে সহয়তা করে। অল্প কথার মাধ্যমে সুশ্রী ভাষায় এক পৃষ্ঠায় দরখাস্ত লিখতে হয়। তবে প্রয়োজনের তাগিদে দুই পৃষ্ঠাও লেখা যায়।
৫. হাতের লেখা সুন্দর করা
দরখাস্ত লেখায় হাতের লেখার উপর বিশেষ নজরদারি করতে হবে কেনো না। হাতের লেখা যত ভালো হবে দরখাস্ত টি তত আর্কষণীয় হবে। এবং সহজে তা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করবে। তাই হাতের লেখা সুন্দর করে সাজিয়ে লেখার দক্ষতা থাকতে হবে দরখাস্ত লেখক/লেখিকাকে।
৬.সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা
দরখাস্ত লেখার আরেকটি যেটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে তা হলো সাঁজিয়ে লেখা। মানুষ অভাসগতভাবে সাজানো গুছানো পরিপার্টি হয়ে থাকতে পছন্দ করে। সেই হিসেবে লেখার ক্ষেত্রেও সাজানো গুছানো লিখায় সবার নজর কাড়ে। সাঁজিয়ের লেখার উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। কোন লাইনটির পর কোন লাইনটি লিখলে দরখাস্ত সুন্দর করে উপস্থাপন করা যাবে সেই দক্ষতা থাকতে হবে। সুন্দরভাবে লেখার চেষ্টা করতে হবে।
৭.কাটাকাটি থেকে বিরত থাকা
দরখাস্ত লেখার সময় কোনো কাটাকাটি করা যাবে না। কাটাকাটির ফলে দরখাস্ত দেখতে খারাপ দেখায়, তাই বানান এবং কাটাকাটি এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বানান ভুল বা কাটাকাটি হলে, এতে দরখাস্ত যতই সাঁজানো গঁছানো হোক না কেন তা প্রত্যাখান হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। আর সেই দরখাস্ত গ্রহনযোগ্যতা হারায়।
৮. দরখাস্ত লেখার প্রধান বিষয় বস্তু
দরখাস্ত লিখার বিষয় বস্তু বলতে দরখাস্তের মূল বক্তব্য উপস্থাপনের আগের বিষয় সমূহকে বোঝায়।যেমন- সবার উপরে প্রথমের সারিতে তারিখ। দ্বিতীয় সারিতে আপনি যার নিকট দরখাস্তটি প্রেরণ করবেন তাকে সম্মোধন করা, যেমন- প্রধান শিক্ষক, প্রধান সভাপতি, প্রধান কাউন্সিল ইত্যাদি। তৃতীয় সারিতে যে প্রতিষ্ঠানের নিকট আপনি দরখাস্ত প্রেরণ করবেন তার নাম। যেমনঃ বিদ্যালয়ের নাম, কলেজের নাম, বোর্ডের নাম, কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম বা কোনো সংগঠনের নাম। চতুর্থ সারিতে যে প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করবেন সেই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা। পঞ্চম সারিতে (বিষয়ঃ) দিয়ে যে বিষয়ের উপর দরখাস্ত লিখবেন তা উল্লেখ করবেন।
৯.দরখাস্ত লিখার মূল বক্তব্য
প্রথমেই যার কাছে দরখাস্ত লিখবেন তাকে সম্মোধন করে লিখা শুরু করবেন। যেমন- প্রিয় স্যার, প্রিয় সভাপতি মহোদয়। তারপর শুরু করবেন দরখাস্ত লেখার বডি পার্ট। "সবিনয় নিবেদন" করে আপনার মতো সাঁজিয়ে গঁছিয়ে আপনি আপনার মনের ভাব টিকে মূল বক্তব্যে প্রকাশ করবেন। যে বিষয় লিখতে চান বা যেই বিষয় সম্পর্কে আপনি দরখাস্তে জানাতে চান তা আপনার মতো করে আপনি তুলে ধরবেন।
১০.দরখাস্তের শেষ অংশ
দরখাস্তের শেষ অংশটি মূলত আপনার বিষয়টি সম্পর্কে প্রেরিত ঠিকানাই অনুরোধ জানানো। তাদের নিকট আপনার কাজ বা বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরা। এই অংশে আপনার লেখাটি হতে হবে নিখুত। যে বিষয়ে দরখাস্ত প্রেরণ করবেন সেই বিষয়টির গুরুত্ব বুঝেই তারা আপনার দরখাস্তটি গ্রহণ করবেন। তাই অত্যন্ত জ্ঞানের সঙ্গে এই অংশটি আপনাকে লিখতে হবে। এর পর আবার তাদের সম্মানের সহিত সম্মোধন করে আপনার দরখাস্তটি লেখা শেষ করতে হবে।
বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম - নমুনা দরখাস্ত
প্রশ্নঃ মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন চেয়ে প্রধান শিক্ষকের নিকট একটি দরখাস্ত লিখো।
তারিখঃ ২৫ নভেম্বর ২০২৪
বরাবর
প্রধান শিক্ষক
ফরিদপুর সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর।
বিষয়ঃ মায়ের অসুস্থতার জন্য ছুটির আবেদন।
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্রী। আমি নিয়মিত সকল ক্লাসে উপস্থিত থাকি। কিন্তু গত ১৫ই নভম্বর ২০২৪ থেকে ২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত আমি শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত থাকতে পারিনি। আমার মা গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে ফরিদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যার জন্য মায়ের সাথে আমার থাকতে হয়েছে।
অতএব জনাবের কাছে আমার বিনীত আবেদন এই যে, গত ১৫-১১-২০২৪ থেকে ২০-১১-২০২৪ তারিখ পর্যন্ত আমার অনুপস্থিতি মঞ্জুর করে বাধিত করবেন।
নিবেদক,
আরিশা ইসলাম আনিকা
ক্লাসঃ দশম
শাখাঃ ক
রোলঃ ১২
এভাবে আপনারা একটি আদর্শ বাংলা দরখাস্ত লিখতে পারেন। তাহলে আপনার দরখাস্ত টি গ্রহণযোগ্য হবে। বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম হলোঃ প্রথমে বরাবর প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান মেনশন করে বিষয় লিখে আবেদন এর বিষয় বর্ণনা করা। এরপর আবেদনকারীর নাম এবং বিস্তারিত লিখে আবেদন পত্র লেখা শেষ করতে হয়।
উপসংহার
দরখাস্ত আমাদের জীবনের নানা বিষয়ে নানা সাহায্য প্রার্থনায় আমরা ব্যবহার করে থাকি। এরূপ দরখাস্ত হতে পারে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট। তাই তা হতে হবে অত্যন্ত মাধুর্যপূণ্য। যাতে তা গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং দরখাস্ত প্রাপক তা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দের সহিত তা পাঠ করতে পারে।এবং আমার আবেদন তারা বুৃজতে এবং গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে। আপনারা দরখাস্ত লেখায় যে ভুল পদ্ধতি এবং ভুল নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন তা নিশ্চয়ই এখন আর আপনাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকবে না। আপনারা উপরের বাংলা দরখাস্ত লেখার নিয়ম অনুসরণ করে খুব সহজে সুন্দর, মাধুর্যপূণ্য দরখাস্ত লিখতে সফল হবেন। এই নিয়ম গুলো অনুসরণ করলে আপনার দরখাস্ত লেখায় কোনো প্রকার ভুলত্রুটি বিদ্যমান থাকবে না। আশা করি দরখাস্ত লেখার এই নিয়ম পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন।ধন্যবাদ
Tags:
Education